‘অতি সরলীকরণ খুব ভালো জিনিস নয়। অতি সরলীকরণ বিষয় বস্তু সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দিতে পারে।’ কথাটা লিখেছিলো হুমায়ূন আহমেদ তার একমাত্র বিজ্ঞান বিষয়ক বই ‘কোয়ান্টাম রসায়ন’য়ের ভূমিকাতে। কথাটা শুধু বহুলাংশে সত্য নয় আক্ষরিক অর্থেই সত্য। বিশেষ করে জনপ্রিয় বিজ্ঞান (popular science) ধারার বই গুলোতে চোখ বোলালে সত্যটা প্রকট হয়ে ধরা পরে। এর সাথে উপরি পাওনা হিসেবে আছে ‘সায়েন্স’কে সায়েন্স না রেখে ‘সায়েন্স ফ্যান্টাসি’ বানিয়ে ফেলার প্রবণতা। এতে মূল যে সমস্যাটা হয় বিজ্ঞানের পাঠকদের বিষয় ভিত্তিক গঠনমূলক বহির্মুখী দৃষ্টি’র বদলে তৈরির বদলে অন্তর্মুখী একটা দৃষ্টি ভঙ্গি। সব জেনে ফেলেছি, সব বুঝে ফেলেছি, সব জানা হয়ে গিয়েছে বা সব করা হয়ে গিয়েছে এরকম মনোভাব তৈরি করে। সামগ্রিক ভাবে এটা বিজ্ঞান চর্চা নয় বিজ্ঞানের ফ্যান্টাসিতে বিভোর হওয়া। দিবাস্বপ্ন দেখা।
কিন্তু প্রাসঙ্গিক যে প্রশ্নটি চলে আসে, এটা কি মুক্ত বিজ্ঞান চর্চার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে নাকি তৈরি করে প্রতিকূলতা? উত্তর, দুটোই। তবে আমাদের বাংলাভাষা ভাষীদের জন্য সম্ভবত প্রতিকূলতাই তৈরি করছে বেশি। উল্লেখ্য সংবাদ মাধ্যম গুলোতে প্রকাশিত বিজ্ঞান বিষয়ক খবর, ইউটিউবে বিজ্ঞানের নানা বিষয়ের উপরে বানানো শর্ট ডকুমেন্টারি অথবা অনেক জনপ্রিয় বিজ্ঞান বই গুলোতে ঘাঁটলেই দৃষ্টি গোচর হয়। ভুল উপস্থাপনা আর মনগড়া বর্ণনায় ভরা। এই জন্য জনপ্রিয় ধারার বিজ্ঞান বই বা লেখা গুলোর সাথে সিরিয়াস ধাঁচের বা সেমি টেক্সট ধারার বই গুলোর প্রচার হওয়া বা লিখাও প্রয়োজনীয়। বাংলাদেশের বাইরে এই ধরণের প্রচুর বই পাওয়া যায়। আমাদের তেমন নেই। কারণ জনপ্রিয় বিজ্ঞান লিখতে যেমন একাডেমিক অভিজ্ঞতা মুখ্য নয়। ভাষার ব্যাবহারে সহজ বোধ্য করে উপস্থাপনই প্রধান। এখানে সেই সুযোগ কম। ভাষার চাইতে টেকনিক্যাল বর্ণনা প্রধান। একটা সময় ছিলো বিজ্ঞান নিয়ে লেখার জন্য লেখক পাওয়া যেতো না। এখন প্রচুর পাওয়া যায়। শুধু এই টেকনিক্যাল ফারাকটা ঘুচানোর মতো যথেষ্ট একাডেমিক লেখক পাওয়াটাই দুষ্কর।
(Posted on Facebook 2016)
